নিউজ24আওয়ার ডেস্কঃ ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি-রে…’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের আবেদন চিরায়ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সবুজ চত্বরে শুক্রবার দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মিলিত হয়েছিলেন। বিভাগের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে এদিন আয়োজন করা হয়েছিল নবীন ও প্রবীণের মিলনমেলা। সদা তারুণ্যেদীপ্ত ক্যাম্পাসে ফিরে তারা ভুলে যান বয়সের ভার। যৌবনের উষালগ্নে কাটিয়ে যাওয়া সময়ের ধূসর স্মৃতি রোমন্থন করে হারিয়ে যান সোনালি অতীতে। আড্ডা আর স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে তারা কাটিয়ে দেন একটি দিন।
হেমন্তের শিশির ভেজা ভোরেই অনেকে চলে আসেন অনুষ্ঠানস্থল টিএসসিতে। এরপর তারা যান অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে। সকাল ৯টার দিকে সেখান থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এটি শেষ হয় টিএসসিতে। এরপর জাতীয় সংগীতের সুরের সঙ্গে মিলনায়তনের সামনে তোলা হয় জাতীয় পতাকা। সঙ্গে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ও বিভাগের মনোগ্রাম খচিত আলাদা দুই পতাকা। টিএসসির মূল মিলনায়তনে ছিল অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। দর্শন বিভাগ শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন। এ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান ?সুফি মো. মিজানুর রহমান, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন, শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আ খ ম ইউনুস প্রমুখ। এতে বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকদের সম্মাননা দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে উদ্বোধনী পর্ব। জুমার নামাজের বিরতির পর টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া আর চত্বরে বসানো অস্থায়ী প্যান্ডেলে চলে মধ্যাহ্ন ভোজ। সাবেক শিক্ষার্থীরা ব্যাচভিত্তিক বসে উপভোগ করেন খাবার। বিকালে ছিল নাশতার ব্যবস্থা।
এদিকে মিলনায়তনে যখন উদ্বোধনী পর্ব আর বিকালে স্মৃতিচারণ চলছিল তখন অনেকেই টিএসসি চত্বরের বিভিন্ন স্থানে মেতে ওঠেন নির্মল আড্ডায়। ছবি তোলার জন্য টিএসসি-মাঠের উত্তর প্রান্তে ‘শতবর্ষের আলোয় দর্শন বিভাগ’ লেখা সাদা কাপড়ে তৈরি প্যান্ডেল ছিল। সেখানে বন্ধুদের নিয়ে অনেকেই ছবি তোলেন। দর্শনের ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা কলাভবনের ২০২৮ নম্বর কক্ষ। সেখান থেকে বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দাউদ খানের নেতৃত্বে গ্র্যাজুয়েটদের উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। মলচত্বরে, মধুর কেন্টিনে, কলাভবনের সামনে আমতলা আর বটতলায়ও আড্ডা দেন তারা। আমতলায় কথা হয় ২০০৩ ব্যাচের তিন্নী ইসাসমিন, সোহেল আমান চৌধুরী, খোরশিদ আলম চঞ্চল, সাব্বিন লস্কর জেমি, শামা আজলা, তৌফিকুল আমিন রাকিব, সানজিদা খাতুন শশী, রঞ্জন বণিক এবং মুসতাক আহমদের সঙ্গে। তারা জানান, ক্যাম্পাস জীবনে ক্লাসের ফাঁকে তাদের আড্ডা হতো এই আমতলায়। তাই সবাই আগে এখানে মিলিত হন। এরপর যান অনুষ্ঠানস্থলে। তারা বলেন, তাদের মধ্যে কারো কারো দেখা হয়েছে ১৬ বছর পরে।
ক্যাফেটেরিয়ায় একই টেবিলে খেতে বসেছিলেন ২০০৬ ব্যাচের ১০-১২ জন। ২০০০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল্লাহ আল মাসউদ, নরসিংদী সিআইডি পুলিশের এসপি সুলতানা ফারজানা মাফিসহ অন্যরা যোগ দেন। অনুষ্ঠানে যোগ দেন দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ১৯৯৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী শরীফুজ্জামান পিন্টু। অনুষ্ঠান চলাকালে জম্পেশ আড্ডায় মেতে ওঠেন সাবেকরা। শতবর্ষী এই বিভাগের সর্ব বয়োজ্যেষ্ঠ ১৯৬৪ ব্যাচের অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ও আয়েশা সুলতানা নিবন্ধন করেন। তবে অসুস্থতার কারণে তারা যোগ দিতে পারেননি। তবে ১৯৬৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এবিএম আবদুস সালাম এসেছিলেন। তিনি বলছিলেন, এখানে এলে তিনি মন ভালো হয়ে যায়। এসেছেন ১৯৭০ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং দর্শন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশ্ব ধর্মতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক কাজী নুরুল ইসলাম, ১৯৭৩ ব্যাচের অনারারি অধ্যাপক আজিজুন নাহার ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ বলেন, সমাজের জন্য নীতিশাস্ত্র আর দর্শনের প্রয়োজনীয়তা চিরায়ত ও সর্বজনীন। বিশেষ অতিথি উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, একটা জাতি-রাষ্ট্রের দার্শনিক চিন্তা গড়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ বিশেষ ভূমিকা রাখে। অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, এই মিলনমেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইতিহাস।
Leave a Reply